ইউক্রেনকে দনবাস অঞ্চল পুরোপুরি ছেড়ে দিতে, ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে, নিরপেক্ষ থাকতে এবং দেশে কোনো পশ্চিমা সেনা মোতায়েন না করার শর্ত দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ক্রেমলিনের শীর্ষ পর্যায়ের চিন্তাভাবনা সম্পর্কে অবগত তিনটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
শুক্রবার আলাস্কায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের বৈঠক হয়। এটি ছিল চার বছরেরও বেশি সময় পর প্রথম রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষ সম্মেলন।
তিন ঘণ্টার বৈঠকের প্রায় পুরোটাই ইউক্রেন নিয়ে সম্ভাব্য সমঝোতার আলোচনায় কেটেছে বলে ওই সূত্রগুলো জানায়। সংবেদনশীল বিষয়ে আলোচনা হওয়ায় তারা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন।
বৈঠকের পর ট্রাম্পের পাশে দাঁড়িয়ে পুতিন বলেন, এই আলোচনার ফলে ইউক্রেনে শান্তির পথে অগ্রগতি হতে পারে। তবে তিনি বা ট্রাম্প কেউ-ই আলোচনার নির্দিষ্ট কোনো বিবরণ প্রকাশ করেননি।
রয়টার্সের অনুসন্ধানে পুতিনের প্রস্তাবের যে চিত্র উঠে এসেছে তা হলো— যুদ্ধবিরতির সম্ভাব্য চুক্তির শর্তাবলীর প্রতি ক্রেমলিন কী চায়, তার সবচেয়ে বিস্তারিত রুশ-ভিত্তিক ধারণা। এ যুদ্ধ ইতিমধ্যেই লাখো মানুষের মৃত্যু ও আহতের কারণ হয়েছে।
সূত্রগুলোর মতে, পুতিন গত জুনে যে দাবি করেছিলেন, তার তুলনায় এখন কিছুটা ছাড় দিচ্ছেন। তখন তিনি ইউক্রেনকে চারটি অঞ্চল—পূর্বাঞ্চলের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক (যা মিলে দনবাস গঠন করে) এবং দক্ষিণাঞ্চলের খেরসন ও জাপোরিঝিয়া—পুরোপুরি ছেড়ে দিতে বলেছিলেন।
কিয়েভ সেগুলো প্রত্যাখ্যান করে বলেছিল, এটি কার্যত আত্মসমর্পণের শর্ত।
নতুন প্রস্তাবে পুতিন জোর দিয়ে বলছেন, ইউক্রেনকে এখনো দনবাসের যেসব অংশ তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সেগুলো পুরোপুরি ছেড়ে দিতে হবে। তবে এর বিনিময়ে মস্কো জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসনে বর্তমান ফ্রন্টলাইনেই যুদ্ধ থামাতে রাজি হতে পারে।
মার্কিন অনুমান ও উন্মুক্ত সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে রাশিয়া দনবাসের প্রায় ৮৮% এবং জাপোরিঝিয়া ও খেরসনের প্রায় ৭৩% অঞ্চল দখলে রেখেছে।
চুক্তির অংশ হিসেবে রাশিয়া খারকিভ, সুমি ও দনিপ্রোপেত্রভস্ক অঞ্চলের যেসব ছোট অংশ দখলে নিয়েছে, সেগুলো ফিরিয়ে দিতে প্রস্তুত বলেও ওই সূত্রগুলো জানায়।
তবে পুতিন আগের মতোই জোর দিয়ে বলছেন, ইউক্রেনকে অবশ্যই ন্যাটোতে যোগদানের আশা ত্যাগ করতে হবে এবং ন্যাটোকে আইনিভাবে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যে জোট পূর্বদিকে আর সম্প্রসারিত হবে না।
এর পাশাপাশি ইউক্রেনের সেনাবাহিনী সীমিত করার শর্ত এবং পশ্চিমা দেশগুলোর কোনো সেনা শান্তিরক্ষী বাহিনী হিসেবে ইউক্রেনে মোতায়েন করা যাবে না—এ দাবিও বহাল রেখেছেন তিনি।