রংপুরের গঙ্গাচড়ার মহিপুরে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত দ্বিতীয় সড়ক সেতুর পশ্চিম তীরে সেতু রক্ষা বাঁধের প্রায় ধসে পড়েছে। এতে বাঁধে প্রায় ৭০ ফুট গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে স্রোতের ক্ষিপ্ত শব্দে ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে লালমনিরহাট–রংপুর সড়কসহ পার্শ্ববর্তী হাজারের বেশি পরিবার।
বুধবার (১৩ আগস্ট) দেখা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টিপাতের পানি হু হু করে বাড়ছে তিস্তার বুকে। এতে তিস্তা সেতুর পশ্চিম পাশের প্রায় ৯০০ মিটার দীর্ঘ সেতু রক্ষা বাঁধের বিভিন্ন অংশে আঘাত হানছে তীব্র স্রোতের ধাক্কা। বাঁধের নিচের মাটি ধুয়ে গিয়ে ব্লকগুলো ধসে পড়ছে। বর্তমানে বাকি ব্লকগুলোও ধীরে ধীরে নেমে যাচ্ছে।
দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে পুরো বাঁধ ভেঙে গিয়ে সেতু ও যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
২০১৮ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) প্রায় ১২১ কোটি টাকা ব্যয়ে গঙ্গাচড়ার মহিপুরে তিস্তার ওপর দ্বিতীয় সড়ক সেতুটি নির্মাণ করে। সেতুটি রংপুর–লালমনিরহাট জেলার মধ্যে যোগাযোগ সহজ করেছে। কিন্তু বর্তমান ভাঙন যদি নিয়ন্ত্রণে আনা না যায়, তবে সেতু ও সংলগ্ন সড়ক মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে।
এদিকে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপ চরের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধির কারণে বন্যার আশঙ্কা করছেন নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ।
গঙ্গাচড়া উপজেলার নোহালী, আলমবিদিতর, কোলকোন্দ, লক্ষ্মীটারী, গজঘন্টা ও মর্ণেয়া ইউনিয়ন, কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া, টেপামধুপুর ইউনিয়ন এবং পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নে তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর, দ্বীপচরের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। বন্যার আশঙ্কায় অনেকে ঘরবাড়ি নিয়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
গঙ্গাচড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, বন্যায় তিস্তার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অন্যদিকে গত কয়েকদিনে পীরগাছা উপজেলার তিস্তা নদী বেষ্টিত ছাওলা ইউনিয়নের শিবদেবসহ আশপাশের এলাকায় শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। শুধু শিবদেব গ্রামেই সাম্প্রতিক ভাঙনে কমপক্ষে ৫০টি বসতবাড়ি, একটি ইবতেদায়ি মাদ্রাসা ও একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তিস্তার ভাঙনে হারিয়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, তীব্র স্রোত ও অব্যাহত ভাঙনের কারণে অনেক পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে, আবার কেউ কেউ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।
নদীর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ৩০ পরিবারের মাঝে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। প্রতিটি পরিবারকে এক বান্ডিল ঢেউটিন ও নগদ ৩ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়।
ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন নদীপাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা। তাদের মতে, সাময়িক সহায়তা জরুরি হলেও দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধ ব্যবস্থা না হলে প্রতিবছর একইভাবে ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা।
এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র, বাপাউবো জানিয়েছে, বুধ ও বৃহস্পতিবার রংপুর অঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের সংলগ্ন অঞ্চলে বন্যা ঝুঁকি আছে। একই সময়ে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও পদ্মা অববাহিকার নদ-নদীসমূহ সতর্ক সীমায় প্রবাহিত হতে পারে এবং পদ্মা নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চল সাময়িকভাবে প্লাবিত হতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার রংপুর বিভাগের পঞ্চগড়ে ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেই সঙ্গে উজানে ভারতের আসাম ও পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। বুধবারও দিনভর রংপুর বিভাগে এবং তিস্তার উজানে দিনভর বৃষ্টিপাত হয়েছে।