রেলওয়েতে ব্যয় সংকোচনে সাশ্রয় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা


, আপডেট করা হয়েছে : 09-08-2025

রেলওয়েতে ব্যয় সংকোচনে সাশ্রয় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা

বিগত সময় বাংলাদেশ রেলওয়েতে বিরাজ করছিল হযবরল পরিবেশ। বিশেষ করে রেল চলাচলের সময়সূচিতে ছিল চরম বিচ্ছৃঙ্খলতা, টিকিট কালোবাজারি ও যাত্রী হয়রানি ছিল নিত্যঘটনা। কিন্তু গত এক বছরে রেল চলাচলের সময়সূচিতে ফিরেছে শৃঙ্খলা, বন্ধ হয়েছে টিকিট কালোবাজারি ও যাত্রী হয়রানি।


টিকিটের কালোবাজারি রোধ এবং শৃঙ্খলা আনার লক্ষ্যে সকল স্টেশনে টিকিট চেকিং ও নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। অনলাইনে টিকিট কালোবাজারি রোধে বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন করে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সময় সুষ্ঠু রেল ব্যবস্থাপনায় গত দুটি ঈদে (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা) ট্রেনের কোনো শিডিউল বিপর্যয় এবং দুর্ঘটনা ঘটেনি। অপরদিকে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের শাসনামলে অতিরিক্ত উন্নয়ন ব্যয় ধরে তৈরি কয়েকটি প্রকল্পের ব্যয় পুনর্মূল্যায়ন ও কাঁটছাট করে রাষ্ট্রের তহবিল সাশ্রয় করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা।


পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় ১৬ বছরে বাংলাদেশ রেলওয়েতে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ হয়েছে। সেই বিনিয়োগের সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতিও তরতর করে তুঙ্গে উঠেছিল। রেলের ইঞ্জিন ও ট্রেন কেনা, এমনকি করোনাকালে সুরক্ষাসামগ্রী কেনায়ও দুর্নীতি হয়। মেগাপ্রজেক্টগুলোতে ব্যয় বাড়িয়ে অর্থ লোপাটের মচ্ছব চলেছে। এসব তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন।


তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট  দায়িত্ব  গ্রহণের পর রেল চলাচলের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, টিকিট কালোবাজারি রোধ এবং স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রণীত উন্নয়ন পরিকল্পনা পুনর্মূল্যায়ন করে ব্যয় সাশ্রয় করা হয়েছে।


উদ্যোগ : বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে নেওয়া অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় হ্রাস। যথাযথ ও নির্মোহ পরিকল্পনার কারণে পদ্মা সেতু (২য় সংশোধিত) রেল সংযোগ, দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে মায়ানমারের নিকটে গুনদুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ, আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণ এবং বিদ্যমান রেল লাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর, রেলওয়ের রোলিং স্টক অপারেশন উন্নয়ন এবং আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেল সংযোগ নির্মাণ প্রকল্পের  ব্যয় হ্রাস পেয়েছে।


যমুনা রেল সেতু : অন্তর্বর্তী সরকারের সময় যমুনা রেল সেতুর কাজ সম্পন্ন করে ব্রিজের ওপর ডাবল লাইন চালু করা হয়েছে। এতে ব্রিজের উপর ট্রেনের গতি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সময় সাশ্রয় হচ্ছে।


অপারেটিং রেশিও : রেলওয়েকে আর্থিকভাবে টেকসইকরণকল্পে অপারেটিং রেশিও  হ্রাস এবং নন কোর আয় বৃদ্ধিকল্পে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। রুট রেশনালাইজেশন করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। রেলওয়ে ভূসম্পত্তি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা এবং অপটিক্যাল ফাইবার লিজ প্রদান নীতিমালা হালনাগাদ করে ইজারার মাধ্যমে আয় বৃদ্ধির কার্যক্রম নেওয়া হচ্ছে। রেলওয়ের ব্যয় ও আয়ের অনুপাত ২.৫ থেকে ২.০৯ তে হ্রাস পেয়েছে। ব্যয় ও আয়ের অনুপাত ২ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।


কল সেন্টার : বাংলাদেশ রেলওয়ের কল সেন্টার নম্বর ১৩১ চালু করা হয়েছে। ফলে রেলসেবা সংক্রান্ত তথ্য এখন জনগণ সরাসরি জানতে পারছে।


কমিউটার ট্রেন সার্ভিস : ঢাকার আশেপাশের জেলা শহর থেকে প্রাত্যহিক প্রয়োজনে ঢাকায় যাতায়াতে কমিউটার ট্রেন সার্ভিস চালু করা হয়েছে। মেট্রোরেলের কোচের আদলে ঢাকা-জয়দেবপুর-ঢাকা রুটে এক জোড়া এবং ঢাকা-নরসিংদী-ভৈরব-নরসিংদী-ঢাকা রুটে এক জোড়া কমিউটার ট্রেন চালু করা হয়েছে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে আট জোড়া কমিউটার ট্রেন নতুন আঙ্গিকে চালু করা হয়েছে। এসব কমিউটার ট্রেনে মেট্রোরেলের কোচের ন্যায় আসনব্যবস্থা থাকায় ট্রেনে অধিক সংখ্যক যাত্রী পরিবহন সম্ভব হচ্ছে।



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার