আধপোড়া একটি ছোট্ট জুতা


, আপডেট করা হয়েছে : 22-07-2025

আধপোড়া একটি ছোট্ট জুতা

ঢাকা শহরের যান্ত্রিক এক দুপুর হঠাৎই দগ্ধ হলো আগুন আর আর্তনাদে। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলে গতকাল সোমবার দুপুর ১টার পর বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে, তা-ও ক্লাস চলাকালীন। 


ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই স্কুলগেটের কাছাকাছি নামে উৎসুক জনতার ঢল। সামনে এগোনোই যেখানে দায়,  তার মাঝেই চোখে পড়ে এক মা—লাকি আক্তার।


চোখে পানি, মুখে একটাই কথা, ‘আমার ছোট ছেলে স্কুলের ভেতর আটকে আছে, ভাই, কেউ ওকে উদ্ধার করুন!’

কেউ তাকে পরামর্শ দিচ্ছে শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে, কেউ বলছে অপেক্ষা করতে। কিন্তু মায়ের কান যেন কোনো কথাই শুনছিল না—শুধু ভেতরে যাওয়া চাই, সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আর্তি।


তবে নিরাপত্তারক্ষীরা কোনোভাবেই কাউকে ভেতরে যেতে দিচ্ছিলেন না। এমনকি সাংবাদিক পরিচয় দিলেও কাজ হচ্ছিল না।


ভেতরে তখন ভয়াবহ অবস্থা। বাতাসে পোড়া গন্ধ। চারদিকে হাহাকার। সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আকুতিতে ভারী হয়ে উঠেছে কিছুক্ষণ আগেও শিশুদের চাঞ্চল্যে ভরে থাকা স্কুল প্রাঙ্গণ।

ভেতরে সময় যেন স্থির হয়ে গেছে, অথচ চারপাশে শুধু ছোটাছুটি। ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুল্যান্স, সেনাবাহিনী—সবাই ব্যস্ত উদ্ধারকাজে। কেউ স্ট্রেচার বয়ে আনছে, কেউ আবার আহতদের তুলছে অ্যাম্বুল্যান্সে। হর্ন বাজিয়ে গাড়িগুলো ছুটছে হাসপাতালের দিকে।


এমন সময় চোখে পড়ে এক শিক্ষক—মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের হিসাববিজ্ঞানের শিক্ষক মো. সবুজ মিয়া।


হাতে মাইক্রোফোন, রক্তদানের আহ্বান জানাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা কেউ বের হচ্ছিল, কেউ অপেক্ষা করছিল। এর মধ্যেই ঘটল দুর্ঘটনা। আমি নিজ চোখে তিন-চারটি শিশুর ক্ষতবিক্ষত দেহ দেখেছি।’

ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের পেছনের দিক থেকে দেখা যায় দেয়াল ভেঙে উদ্ধারকারীরা বিমানের অংশ বের করছেন। পোড়া চেয়ার, ভাঙা জানালা, টিনের ছিন্নভিন্ন অংশ...। তার ঠিক পাশেই দেখা যায়—আধপোড়া একটি ছোট্ট জুতা। একেবারে একাকী পড়ে আছে ধ্বংসস্তূপের মাঝে। সঙ্গে এক অজানা আশঙ্কা—এই জুতার মালিকটা বেঁচে আছে তো? 



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার