আগামী বুধবার থেকে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সব উন্নয়নকাজ বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ঠিকাদারেরা। আজ রোববার সকালে নগরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে তাঁরা এ ঘোষণা দেন। ‘রাজশাহীর সচেতন নাগরিক সমাজ ও রাসিক ঠিকাদারবৃন্দ’ ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঠিকাদার তরিকুল ইসলাম।
ঠিকাদারদের অভিযোগ, সিটি করপোরেশনের সেবা প্রদানে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। সচিব রুমানা আফরোজ ঠিকাদারদের বিল ছাড় করছেন না। কারণ ছাড়াই তিনি দিনের পর দিন বিলের ফাইল আটকে রাখছেন। সংবাদ সম্মেলনে সিটি করপোরেশনে স্থায়ী প্রশাসক নিয়োগ ও সচিব রুমানা আফরোজকে অপসারণের দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ঠিকাদার তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম ও সচিব রুমানা আফরোজ ভোগান্তি বাড়িয়ে সেবাগ্রহীতাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা রাসিকের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অসংখ্য প্রশ্নবিদ্ধ কাজে জড়িয়ে পড়েছেন। ফ্যাসিস্ট ধাঁচের আচরণ করা এই সচিবের বিরুদ্ধে উত্থাপিত নানা অভিযোগ ও জনভোগান্তির হাত থেকে আমরা পরিত্রাণ পেতে চাই।’
তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘সচিব গত এপ্রিলে রাসিকে যোগদান করে সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি শুরু করেন। শহরে চলমান বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের বিপরীতে ঠিকাদারদের বিল–সংক্রান্ত ফাইল মাসের পর মাস কোনো কারণ ছাড়াই আটকে রাখা হচ্ছে। ঠিকাদারেরা বিলের জন্য সচিবের কক্ষে গেলে তিনি তাঁদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো যথাসময়ে বিল না পাওয়ায় উন্নয়নকাজে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। কোনো কোনো স্থানে চলমান কাজ থমকে গেছে। কাজের ধীরগতি ও বন্ধ থাকার কারণে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের ধারণা, বর্তমান সরকার ও সিটি করপোরেশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অসৎ অভিপ্রায় নিয়ে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন উচ্চপদস্থ দু–একজন কর্মকর্তা।’
তরিকুল ইসলাম আরও বলেন, সিটি করপোরেশনের কনজারভেন্সি শাখা, পরিবহন বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, প্রকৌশল বিভাগসহ অন্যান্য শাখায় কর্মরত ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে সচিবের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। চাকরি করায় কর্মকর্তারা সচিবের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পান না। যেসব কর্মকর্তা–কর্মচারী অবসরে গেছেন, তাঁদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রেও তিনি স্বাক্ষর করতে চান না বলেও অভিযোগ। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের বিলগুলোও কোনো কারণ ছাড়াই মাসের পর মাস আটকে রাখা হচ্ছে। এ সময় অন্যান্য সেবা প্রদানেও নগরবাসীকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রশাসক। তিনি গোটা বিভাগের কর্তা। এর সঙ্গে সিটি করপোরেশনের মতো আরও একটি বড় সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব তাঁর ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিটি করপোরেশনের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠানে অস্থায়ী প্রশাসকের পরিবর্তে স্থায়ী প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া জরুরি। স্থায়ী প্রশাসক নিয়োগ দিলে সেবার মান বৃদ্ধি পাবে এবং কাজে গতিশীলতা ফিরবে।
হয়রানির জন্য সচিবের অপসারণ দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘দ্রুত এসব সমস্যা সমাধান করা না হলে রাজশাহীর সাধারণ ভুক্তভোগী মানুষদের নিয়ে ঠিকাদারেরা একযোগে সিটি করপোরেশনের চলমান সব উন্নয়নকাজ ২৩ জুলাই থেকে বন্ধ করার ঘোষণা দিচ্ছি। এ ছাড়া ২৭ জুলাই নগর ভবনের সামনে মানববন্ধন করা হবে বলে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
সংবাদ সম্মেলনে বেলাল খান, তৌহিদুল ইসলাম, আজিজুল হক ভুঁইয়া, গাজী সালাহউদ্দীন, ইয়াহিয়া খান, রেজাউল ইসলাম, মো. আমিন, মো. শওকত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে সচিব রুমানা আফরোজের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলে তিনি ধরেননি। কার্যালয়ের টেলিফোনে কল করলে ব্যক্তিগত সহকারী ফোন ধরে প্রশ্ন শোনার পর বলেন, ‘ঠিক আছে, আমি স্যারকে দিচ্ছি’ বলে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে আবার ফোন দিলে অপর প্রান্ত থেকে সংযোগটি কেটে দেওয়া হয়।