বাংলাদেশ দলের জ্যেষ্ঠ সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ইতিহাসকে গুরুত্ব দিতে চাইলেন না। টানা ৬ টি-টোয়েন্টি হারের পর ডাম্বুলায় দ্বিতীয় ম্যাচ জয়ের আত্মবিশ্বাসকে সর্বাধিক মূল্য দিচ্ছেন তিনি। তবু আজ সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচের আগে ২০১৮ সালে রক্ত গরম করা নিদাহাস ট্রফির প্রসঙ্গ উঠতে বাধ্য। এ মাঠে ভারতের বিপক্ষে জেতা ফাইনাল শেষ বলে হারের প্রসঙ্গ এখনো ক্রিকেটীয় আড্ডায় চলে আসে।
আর আজ খেলা প্রেমাদাসাকে ঘিরেও অতীত স্মৃতিচারণা চলছে। টি-টোয়েন্টির মুখোমুখিতে শ্রীলঙ্কা এগিয়ে। কিন্তু ভেন্যু প্রেমাদাসাকে ব্র্যাকেটবন্দি করলে বাংলাদেশ এগিয়ে ৩-২ ব্যবধানে। অবশ্য ক্রিকেটে অতীত কিংবা পরিসংখ্যান—কোনোটিই শেষ কথা নয়।
টি-টোয়েন্টির মতো দ্রুতগতির ক্রিকেটে এসব আরো ঠুনকো। ম্যাচ পরিকল্পনার প্রথম রূপকল্প ব্যর্থ হলে দ্বিতীয় গিয়ারে যাওয়ার আগে চলে আসতে পারে প্ল্যান সি প্রয়োগের সময়। আর বাংলাদেশ দলের অবস্থা এমন যে সোনালি অতীত ভেবে নষ্ট করার মতো সময় হাতে নেই। সালাউদ্দিনের কাছে তা একবাক্যে অর্থহীন, ‘আপনি যখন ভালো খেলবেন, জিতবেন, তখনই আসলে অনুপ্রেরণা বেশি আসে।
শেষ ম্যাচটা যেহেতু আমরা ভালোভাবে জিতেছি, সেটা একটা ভালো অনুপ্রেরণা। অতীতে কী করেছি, মনে হয় না যে ওটা বড় অনুপ্রেরণা। অতীত ম্যাটার করে না। কারণ কালকে (আজ) যদি খারাপ খেলি তাহলে আমাদের খারাপই (সমালোচনা) হবে। তাই চেষ্টা করব, সব দিক থেকে দিয়ে যেন আমরা ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিংয়ে ভালো করতে পারি।
’
নাগিন ডান্সের সূত্রে ফাইনালে শ্রীলঙ্কান দর্শকদের ভারতীয় সমর্থক বনে যাওয়া, ডাগ আউট থেকে ভারতের তৎকালীন কোচ রবি শাস্ত্রীর বিষোদগার—সব মিলিয়ে নিদাহাস ট্রফি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের খেলা সেরা টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট। সেই আসরে সাকিব আল হাসান ছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। অতীত থেকে সালাউদ্দিনের শুধু এই একজনকেই মনে পড়ছে আজকের সিরিজের অলিখিত ফাইনালের আগে, ‘দেখুন, আমাদের অনেক কিছু (একাদশ ভাবনা) নিয়ে বিলাসিতা করার সুযোগ থাকে না। অনেক সময় ব্যাটসম্যান কম হয়ে যায়, অনেক সময় বোলার কম হয়ে যায়। ধরেন সাকিব যখন ছিল, তখন হয়তো আমাদের সেই লাক্সারি করার সুযোগ ছিল। বাড়তি বোলার কিংবা ব্যাটসম্যান খেলাতে পারতাম। আমি জানি, নাসুমকে (আহমেদ) খেলালে হয়তো আমাদের লাভ হতো। কিন্তু তখন হয়তো রিশাদকে (হোসেন) বা অন্য কাউকে বসাতে হবে। আসলে আমাদের অনেক কিছু ভেবে একাদশ গড়তে হয়।’
অতীতের অকার্যকারিতার সাক্ষ্য এবারের ওয়ানডে সিরিজেই মিলেছে। নিদাহাস ট্রফিতে বাংলাদেশ দুইবারই শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছিল পরে ব্যাটিং করে। আবার এবারের ওয়ানডে সিরিজে এই মাঠে অনুষ্ঠিত দুটি ম্যাচই জিতেছে পরে ব্যাটিং করা দল। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটাররা অস্বস্তিতে ভুগেছেন। টসজয়ী অধিনায়কের তাই আজও পরে ব্যাট করার সম্ভাবনা বেশি।
ভাগ্য তো আর মুঠোয় নেই। বাংলাদেশ আবার একাদশ গঠন করা নিয়েও দোদুল্যমানতায় ভুগছে। মিডল অর্ডারে বিকল্প নেই। লোয়ার অর্ডারে বড় শট খেলার জন্য জাকের আলীকে ওপরে তোলার পরিকল্পনা নেই, সালাউদ্দিনের কথায় সেই ইঙ্গিত, ‘নিচে পাওয়ার হিটার দরকার। আমরা চাই জাকের ও শামীম শেষ করুক। ওদের এমন কোনো দায়িত্ব দেব না যে কারণে ওদের দলের ইনিংস বিল্ড (গোছানো) হবে।’ তবে ধারাবাহিকতার কারণে শামীমকে ঘিরে সালাউদ্দিনের মনে নতুন পরিকল্পনাও উঁকি দিচ্ছে, ‘শামীম যেভাবে উন্নতি করছে, তাতে যদি ওকে বেশি ওভারও দেওয়া হয়, সেখানেও সে ভালো করতে পারবে। এটা আমাদের অনেক আত্মবিশ্বাস দেবে।’
এই ছোটখাটো ভাবনা যোগ-বিয়োগ করে একাদশ নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে প্র্যাকটিসের ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে, মেহেদী হাসান মিরাজকে খেলানো নিয়ে সংশয়ে আছে টিম ম্যানেজমেন্ট। নেটে শুধু বোলিং করেছেন তিনি। অন্যদিকে মাঠে ঢুকে সবার আগে উইকেট খুঁটিয়ে দেখেন শেখ মেহেদী, বোলিংয়ের পাশাপাশি কোচের চোখের সামনে ব্যাটিং করেছেন দীর্ঘক্ষণ। পাশের উইকেটে নাঈম শেখের ব্যাটিং অনুশীলন কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। আবার বাঁহাতি স্পিনার নাসুমকেও উল্লেখযোগ্য সময় নেটে ব্যাটিং করিয়েছেন কোচ। দেখে বোঝা যায়, ডাম্বুলায় জেতা ম্যাচের একাদশ ওলটপালট করার ব্যাপারে ইচ্ছুক না হলেও বিকল্প ভাবনার সুযোগ তৈরি রাখছে বাংলাদেশ দল। এই অবস্থায় প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে ভেবে আকুল হওয়ার কারণ দেখছেন না সালাউদ্দিন। তাঁর কাছে জয়ের পথ তৈরি করতে হয় বর্তমানে দাঁড়িয়ে।
তবু কেন যেন মনে হচ্ছে, নিদাহাস ট্রফির ঝাঁজ আজও ছড়াবে প্রেমাদাসায়। জয়ী দলের নামটাই শুধু অজানা!