‘বেপরোয়া’ বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংঘাতে ছয় মাসে নিহত ৪৩


, আপডেট করা হয়েছে : 13-07-2025

‘বেপরোয়া’ বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংঘাতে ছয় মাসে নিহত ৪৩

একটি মানবাধিকার সংস্থার পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বিএনপি ও তার সহযোগী এবং অঙ্গ সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরীণ সংঘাতে অন্তত ৪৩ জন নিহত হয়েছেন। দলটি কি ক্রমশ নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে? 


পুরনো ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় গত ৯ জুলাই ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগকে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়। নিহত সোহাগ যুবদলের সাবেক কর্মী বলে স্থানীয়রা জানায়। চাঁদা না পেয়ে তাকে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। সোহাগকে পাথর দিয়ে থেঁতলে দেওয়ার নৃশংস ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর এই বিষয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়।     


তবে পুলিশ বলছে, পুর্ব শত্রুতা ও বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে তাকে হত্যা করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ভাঙারি ব্যবসাকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়িক দ্বদ্ব এবং পূর্ব শত্রুতার জেরে তাকে হত্যা করা হয়েছে। ৯ জুলাই সোহাগকে হত্যা করা হলেও শনিবার ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া পর সংবাদমাধ্যমগুলোতে খবর প্রকাশিত হয়। এরপর ঘটনার বিষয়ে তৎপর হয় পুলিশ।     


সোহাগ হত্যার ঘটনায় এরইমধ্যে কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক জলবায়ু বিষয়ক সহ-সম্পাদক রজ্জব আলী ওরফে পিন্টু এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাবাহ করিম ওরফে লাকি, ছাত্রদলের সদস্যসচিব অপু দাস এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালুসহ পাঁচজনকে সংগঠন থেকে বহিস্কার করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনগুলো। তারা সবাই ওই হত্যা মামলার আসামি, তবে পলাতক। 


এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট পাঁচজনকে একটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন, মাহমুদুল হাসান মহিন, তারেক রহমান রবিন, আলমগীর হোসেন, মনির ওরফে ছোট মনির  ও মো. টিটন গাজী। এই ঘটনায় মোট ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বাকিরা পলাতক। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে দুইজনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আর একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।


পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীদের বেপরোয়া আচরণ লক্ষ্য করা গেছে। দলটির পক্ষ থেকে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হলেও থামছে না সংঘাত, সংঘর্ষের ঘটনা।  


বিশ্লেষকেরা বলছেন, নিজেরা ক্ষমতায় আছে বলে মনে করছে দলটির নেতাকর্মীদের অনেকে। এ কারণেই তাদের মধ্যে বেপরোয়া আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সেইসাথে ব্যবস্থা নেওয়ার পরও অনেক নেতাকর্মীকে দলে সক্রিয় হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে বলে দলীয় ব্যবস্থা কাজে আসছে না।    


এদিকে, অন্যায়কারীদেরকে অন্তর্বর্তী সরকার প্রশ্রয় দিচ্ছে কি না এমন প্রশ্ন তুলেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। যারা ‘‘বিভিন্নভাবে ‘মব’ (দলবদ্ধ সহিংসতা) সৃষ্টি করে একটি পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে, সেখানে সরকারের কোনো প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় আছে কি না,’’ সে প্রশ্ন তারেক রহমানের।    


রাজনৈতি সংঘাতে বিএনপি


মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাবে বাংলাদেশে জানুয়ারি থেকে জুন এই ছয় মাসে রাজনৈতিক সংঘাতে ৬৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এই সময়ে আহত হয়েছেন দুই হাজার ৭৭০ জন। আর সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে ২৭০টি।  


এরমধ্যে মধ্যে শুধু বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংঘাতে নিহত হয়েছেন ২৬ জন। তবে বিএনপি ও তার সহযোগী এবং অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে সংঘাতের হিসাব করলে নিহত হয়েছেন ৪৩ জন। দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ সংঘাত আর মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের মধ্যে সহিংসতার ঘটনায়। আর বাকি সংঘাতগুলোর অধিকাংশেই প্রতিপক্ষ হিসাবে বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো জড়িত।


এসকল ঘটনায় অবশ্য দলের পক্ষ বহিস্কারের মতো পদক্ষেপসহ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিএনপির দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, ৫ আগস্টের পর থেকে সংঘাত সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের তিন হাজার ২০০ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপির এক হাজার ৮০০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে দলটি। এদের ৮০০ জনকে বহিষ্কার, ৫০ জনের পদ স্থগিত, কমপক্ষে ৭০০ জনকে কারণ দর্শানো নোটিশ, ১০০ জনকে সতর্ক এবং ১৫০ জনকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের নোটিশ দেয়া হয়েছে। 


ছাত্রদল এখন পর্যন্ত ৪০০ জনকে বহিষ্কার ও ৬০০’র বেশি নেতা-কর্মীকে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক দলের কমপক্ষে ১০০ জনকে বহিষ্কার ও ১৫০ জনকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যুবদলের শতাধিক নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার