সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামবিদ্বেষের ঘটনা প্রবলভাবে বাড়ছে। বিশেষ করে, অতি সম্প্রতি মুসলিম প্রার্থী হিসেবে জোহরান মামদানি নিউ ইয়র্কের মেয়র নির্বাচনের জন্য ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রাইমারিতে দলের মনোনয়ন জেতার পর দেশটিতে মুসলিমবিদ্বেষের ঢেউ ব্যাপকভাবে সামনে আসছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু বেনামি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ও অনলাইন মুসলিমবিরোধী ব্যক্তিরাই মামদানি ও তার পরিচয় নিয়ে আক্রমণ করছেন না, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছের লোক থেকে বহু রাজনীতিবিদ এতে যোগ দিয়েছেন।
রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান র্যান্ডি ফাইন কোনো ধরনের প্রমাণ ছাড়াই বলেছেন, মামদানি নির্বাচিত হলে নিউ ইয়র্ক সিটিতে 'খিলাফত' প্রতিষ্ঠা করবেন। একধাপ এগিয়ে কংগ্রেসওম্যান মার্জোরি টেলর গ্রিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বোরকা পরা স্ট্যাচু অফ লিবার্টির একটি কার্টুন পোস্ট করেছেন।
এ ছাড়া ৩৩ বছর বয়সী জোহরান মামদানিকে সরাসরি আক্রমণ করেছেন দেশটির সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন। তিনি বলেছেন, ইসলাম একটি রাজনৈতিক মতাদর্শ, এটি কোনো ধর্ম নয়।
রক্ষণশীল অ্যাক্টিভিস্ট চার্লি কার্ক ৯/১১ হামলার কথা উল্লেখ করে মামদানিকে 'মুসলিম মাওবাদী' বলে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে ডানপন্থী ভাষ্যকার অ্যাঞ্জি ওং সিএনএনকে বলেছেন, নিউ ইয়র্কের মানুষ তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন, কারণ তারা এখানে একজন মুসলিম মেয়রের সঙ্গে বসবাস করছেন।
এ ছাড়া ডানপন্থী কর্মী এবং ট্রাম্প প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত লরা লুমার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, মামদানি মেয়র হলে নিউইয়র্কে আবার ৯/১১ ঘটবে। তিনি মামদানিকে 'জিহাদি মুসলিম' বলে উল্লেখ করেছেন।
নিউইয়র্ক সিটির কাউন্সিল সদস্য ভিকি পালাদিনো এক রেডিও সাক্ষাৎকারে মামদানিকে 'পরিচিত জিহাদি সন্ত্রাসী' এবং 'কমিউনিস্ট' বলে আখ্যা দেন। তিনি মামদানির মার্কিন নাগরিকত্ব থাকা সত্ত্বেও তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়ার দাবি জানান।
রিপাবলিকান প্রতিনিধি অ্যান্ডি ওগলেস বিচার বিভাগে একটি চিঠি পাঠিয়ে মামদানির নাগরিকত্ব বাতিল এবং তাকে নির্বাসিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
গত রোববার কংগ্রেসম্যান ব্র্যান্ডন গিল মামদানির বিরিয়ানি খাওয়ার একটি ভিডিও পোস্ট করেন তাকে তৃতীয় বিশ্বে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সভ্য লোকেরা এভাবে খায় না।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও মামদানিকে একহাত নিয়েছেন। তিনি মামদানিকে 'শতভাগ কমিউনিস্ট উন্মাদ' বলে মন্তব্য করেন এবং তার চেহারা ও কণ্ঠস্বর নিয়েও কটাক্ষ করেন। তবে তিনি সরাসরি মামদানির ধর্ম বা জাতিগত পরিচয় নিয়ে কিছু বলেননি।
আমেরিকার মুসলিম নাগরিক অধিকার সংগঠন কেয়ারের গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি পরিচালক কোরি সাইলর গত মাসের শেষের দিকে গার্ডিয়ানকে বলেন, আমরা যেসব প্রবণতা দেখছি, তা সাধারণ ইসলামবিদ্বেষী বক্তব্যের প্রতিফলন।
তিনি সতর্ক করে বলেন, ২০১০ সালের গ্রাউন্ড জিরোর কাছে ইসলামিক কালচারাল সেন্টার নির্মাণ নিয়ে যে ধরনের জাতীয় বিতর্ক হয়েছিল, ঠিক তেমন কিছুই আবার ঘটতে পারে।