ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ নিয়ে যেসব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি


, আপডেট করা হয়েছে : 22-05-2025

ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ নিয়ে যেসব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি

গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। সেই হামলার হামলার প্রায় ১৫ দিন পর ভারত সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণ রেখার ওপারে থাকা নয়টা লক্ষ্যবস্তুকে নিশানা করে সামরিক অভিযান চালায়। ভারত দাবি করেছে, নিশানা করা ওই লক্ষ্যবস্তুগুলো 'সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি' ছিল।


এরপরই সীমান্তের ওপার থেকে ড্রোন দিয়ে হামলা চালায় পাকিস্তান। এই সংঘর্ষ চলাকালীন এবং তার পরেও দু'তরফে বহু দাবি জানানো হয়েছে, অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগও উঠেছে। এর মধ্যে কিছু দাবি যাচাই করা হয়েছে। তবে বেশিরভাগই এখনও নিশ্চিত করা যায়নি।  


পাশাপাশি অনেক সামরিক, কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রশ্ন রয়েছে যার সরাসরি কোনো উত্তর এখনো মেলেনি। প্রতিরক্ষা, কূটনীতি ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে এমনই কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করেছে বিবিসি। 


পেহেলগামে হামলাকারী


পেহেলগাম হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে চিহ্নিত করেছিল জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ। এদের মধ্যে একজন কাশ্মীরি ও দু'জন পাকিস্তানি ছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছিল। 


এদের মধ্যে আদিল হুসেন ঠোকার, হাশিম মুসা ওরফে সুলেমান এবং আলি ভাই ওরফে তালহা ভাই বলেও পুলিশের তরফে জানানো হয়। এদের সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার জন্য ২০ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়।


পরে জাতির উদ্দেশে ভাষণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, সন্ত্রাসীরা আমাদের বোনেদের সিঁদুর মুছে দিয়েছে। তাই ভারত এই সন্ত্রাসের সদর দফতরকেই ধ্বংস করেছে। ভারতের এই হামলায় শতাধিক ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে।


কিন্তু এখনো যে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে তা হলো– পেহেলগামের হামলাকারীদের কী হলো?


সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার (অবসরপ্রাপ্ত) জীবন রাজপুরোহিতের কাছে এই একই প্রশ্ন করেছিল বিবিসি। উত্তরে ব্রিগেডিয়ার রাজপুরোহিত বলেছেন, এই সন্ত্রাসীদের নির্মূল করা কঠিন। কারণ তাদের চারপাশে স্থানীয় সমর্থকদের একটা নেটওয়ার্ক রয়েছে। দ্বিতীয়ত, তারা পাকিস্তানের কাছ থেকে সাহায্য পায়।


'এই দু'টো কারণে ভারতের জন্য সন্ত্রাসবাদকে একেবারে গোড়া থেকে উৎখাত করাটা জরুরি হয়ে পড়েছে। (সন্ত্রাসবাদ) এটা একটা কাঠামো। তাই সন্ত্রাসবাদের শিকড়কে উপড়ে ফেলতে হলে শুধু সন্ত্রাসীদের হত্যা করাই যথেষ্ট নয়, বরং যে কাঠামো এটা পরিচালনা করে সেটা গুঁড়িয়ে ফেলা দরকার।' 


তিনি বলছেন, এই সন্ত্রাসীদের হত্যার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো পাকিস্তানে এই গোটা মতাদর্শের অবসান করা। কয়েকজন সন্ত্রাসীকে হত্যা করে সন্ত্রাসবাদের মূলে আঘাত হানা যাবে না। 


হতাহত কতজন?


আন্তঃসীমান্ত হামলায় বেসামরিক নাগরিক ও নিরাপত্তাকর্মীরাও নিহত হয়েছেন এবং বিবিসিসহ বেশ কয়েকটা গণমাধ্যম নিহতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছে। তবে নিহতদের সম্পর্কে কোনো সরকারি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেনি ভারত।


এখানে যে প্রশ্নটা উঠছে তা হলো, যখন সীমান্তে গোলাগুলি চলার আশঙ্কা ছিল, তখন কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কি সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া উচিত ছিল না?


এই প্রশ্নের উত্তরে সেনার এয়ার মার্শাল (অবসরপ্রাপ্ত) দীপ্তেন্দু চৌধুরী বলেছেন, এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য নির্দিষ্ট মানদণ্ড রয়েছে। প্রত্যেক রাজ্যের নিজস্ব প্রটোকল থাকে। কাশ্মীরের সীমান্তবর্তী এলাকায় জনসংখ্যা সবচেয়ে কম। জম্মুতে জনসংখ্যা বেশি এবং পাঞ্জাবে তা সর্বোচ্চ।


'সীমান্তের কাছাকাছি যারা বাস করেন তারা এর আগেও এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন। বহু বছর ধরেই তারা গোলাগুলির সম্মুখীন হচ্ছেন। সেখানকার মানুষ আগে থেকেই প্রস্তুত থাকেন। সেখানে বাংকার আছে। নানান গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থাও আছে। যখন সাইরেন বেজে ওঠে বা ব্ল্যাকআউট হয়, তখন তারা জানে কী করতে হবে।' 


তবে যুদ্ধের আশঙ্কা বৃদ্ধি হলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয় বলে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন। 


তিনি বলেছেন, যখন যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়ে বা সেনা মোতায়েনের পরিমাণ বাড়তে থাকে, তখনই সেখান থেকে বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে দেওয়ার হয়। সীমান্ত এলাকা খালি করা হয়।


এর জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়। কিন্তু যেহেতু এটা সেই অর্থে যুদ্ধ ছিল না, তাই তেমনটা করা হয়নি। গোলাগুলি হঠাৎ শুরু হয়ে যায়, তাই আগে থেকে সতর্ক করা সম্ভব হয়নি। 


যুদ্ধ বিমান ভূপাতিত করার দাবি


জম্মু ও কাশ্মীরের পাম্পোর এলাকায় একটা বিশাল ধাতব টুকরো পাওয়া গিয়েছিল। তবে সেটা কোনো ভারতীয় বিমানের অংশ ছিল কিনা তা অস্বীকার বা নিশ্চিত কোনোটাই করেনি ভারত সরকার।


অন্যদিকে পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা ভারতের রাফাল যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে।


এয়ার মার্শাল একে ভারতীকে সাংবাদিক সম্মেলনে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা কম্ব্যাট পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি এবং ক্ষতি এরই একটা অংশ। আপনার প্রশ্ন করা উচিত, আমরা কি আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছি? আমরা কি সন্ত্রাসী ঘাঁটি ধ্বংস করার লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছি? এবং উত্তর হলো- হ্যাঁ।


এয়ার মার্শাল ভারতী সেই সময় বলেছিলেন, এই মুহূর্তে এর চেয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলা যাচ্ছে না। এতে বিরোধীরা লাভবান হতে পারে...। হ্যাঁ, আমি শুধু এটুকুই বলতে পারি... আমাদের সব পাইলট দেশে ফিরেছেন।


ভারত পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে কি-না জানতে চাইলে এয়ার মার্শাল একে ভারতী বলেছিলেন, আমাদের ভূখণ্ডে ওদের বিমানকে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। সেগুলোর ধ্বংসাবশেষ আমাদের কাছে নেই।


এয়ার মার্শাল চৌধুরীর মতে, যখন কোনো অভিযান চলে তখন ক্ষয়ক্ষতির কথা জনসমক্ষে জানাতে হবে কিনা তা নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে।



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার