বিমানবন্দরের বাইরে আমরা বিলাসবহুল গাড়ি, সাটল বাস বা ট্রেন দেখে আমরা অভ্যস্ত। কিন্তু ভারত মহাসাগরের মধ্যে অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি মালদ্বীপে গেলে আপনার ধারণা পাল্টে যাবে।
দেশটির রাজধানী মালের বিমানবন্দর থেকে বের হলেই আপনার চোখে পড়বে- সাগরের নীল জলে দোল খাচ্ছে হরেক রকম বিলাসবহুল প্রমোদতরী বা ইয়ট। ইউরোপ-আমেরিকাসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকেও মালদ্বীপে অবকাশ যাপন করতে আসছেন পর্যটকরা।
বিমানবন্দর থেকে বের হয়েই পশ্চিমা পর্যটকরা চেপে বসেন বসেন প্রমোদতরীতে। গন্তব্য-মাফুশি দ্বীপ, ভাধু আইল্যান্ড, ফুলহাদু আইল্যান্ড ও ব্যানানা রিফসহ বিভিন্ন নয়নাভিরাম দ্বীপ। সমুদ্রের নীলজন ভেদ করে দ্রুত গতিতে চলতে থাকে প্রমোদতরী।
মালদ্বীপে ভারতীয় পর্যটক কমলেও বেড়েছে চীন ও পশ্চিমা দেশগুলোর পর্যটক। ইউরোপীয় পর্যটকদের বেশিরভাগই ভিড় করেন মাফুশি দ্বীপে। সমুদ্রের পানিতে সার্ফি ও তলদেশে ড্রাইভিংয়ের জন্য বিভিন্ন পর্যটক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে দ্বীপটিতে। মালদ্বীপ মুসলিম দেশ হওয়ায় পশ্চিমা স্বল্পবসনা নারী পর্যটকদের পোশাক সম্পর্কে সতর্ক করে দ্বীপটির বিভিন্ন স্থানে বড় বড় সাইনবোর্ড স্থাপন করেছে মালদ্বীপ কর্তৃপক্ষ। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত দেশটি পর্যটনের জন্য সারা বিশ্বে সুপরিচিত। সুন্দর সুন্দর দ্বীপ, মনোমুগ্ধকর সৈকত এবং পাঁচ তারকা রিসোর্ট থাকায় দেশটি বিলাসবহুলভাবে ছুটি কাটানোর জন্য আদর্শ। মোহামেদ মুইজ্জু মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর দেশটিতে রেকর্ড সংখ্যক চীনা পর্যটক বেরেছে।
২০২৪ সালে দেশটিতে সবচেয়ে বেশি ভ্রমণ করেছেন চীনের পর্যটকরা। গত বছর মোট ১ লাখ ৮৭ হাজার ১১৮ জন চীনা পর্যটক মালদ্বীপ ভ্রমণ করেছেন।
বাংলাদেশি পর্যটকও বাড়ছে মালদ্বীপে। এখন সপ্তাহে ৫ দিন মালদ্বীপে ফ্লাইট পরিচালনা করছে বাংলাদেশের বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস-বাংলা। ৫০ থেকে ৫১ হাজারে পাওয়া যাচ্ছে রিটার্ন টিকিট। বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য ভিসা না লাগলেও দেশটিতে প্রবেশের জন্য ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা যেসব ডকুমেন্ট চাইবে-তা হলো, রিটার্ন টিকিট ও হোটেল বুকিং।
সাদা বালির সৈকত, স্বচ্ছ পানি এবং নীল আকাশের জন্যও মালদ্বীপের খ্যাতি রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থিত ভারত মহাসাগরের দ্বীপদেশ মালদ্বীপ এক কথায় অপরূপ সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি।
১২ শতাধিক ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত মালদ্বীপ। মালদ্বীপের আয়তন-৩০০ বর্গ কিলোমিটার। এর মধ্যে বাসযোগ্য মাত্র ২০০টি দ্বীপ। বাকিগুলো জোয়ারের পানিতে ডুবে যায়, কোনোটিতে ড্রাইভিং করতে যান পর্যটকরা।
মালদ্বীপের মোট জনসংখ্যা ৫ লাখ ৫৭ হাজার ৪২৬ জন। এর মধ্যে ৩ লাখ মালদ্বীপের নাগরিক। এ ছাড়াও দেশটিতে রয়েছেন দেড় লাখেরও বেশি বাংলাদেশি অভিবাসী।
এদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক বাংলাদেশি অভিবাসী বৈধভাবে দেশটিতে বসবাস করছেন। সেখান হোটেল-রেস্তোরাঁর বেশিরভাগ কর্মী বাংলাদেশি। ইমিগ্রেশন বিভাগসহ মালদ্বীপের অনেক সরকারি দপ্তরে বালো বেতনে চাকরি করছেন বাংলাদেশিরা।
সাইফুল ইসলাম নামে এক বাংলাদেশি জানালেন, মালে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগে তিনি চাকরি করেন। তার মাসিক বেতন প্রায় দেড় হাজার মার্কিন ডলার। এছাড়া অনেক বাংলাদেশি এখানে মাছ শিকারের কাজেও করেন।
মধ্যযুগে ইবনে বতুতা ও অন্যান্য আরব পর্যটকেরা এই অঞ্চলকে ‘মহাল দিবিয়াত’ নামে উল্লেখ করেছেন। আরবীতে মহাল অর্থ প্রাসাদ। বর্তমানে এই নামটিই মালদ্বীপের রাষ্ট্রীয় প্রতীকে লেখা হয়।