ভোজ্য তেলের চাহিদার ৪০ ভাগ সরিষা দিয়ে পূরণ করার টার্গেট


, আপডেট করা হয়েছে : 02-02-2024

ভোজ্য তেলের চাহিদার ৪০ ভাগ সরিষা দিয়ে পূরণ করার টার্গেট

কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে ভোজ্য তেলের যে চাহিদা রয়েছে আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে সেই চাহিদার ৪০-৫০ শতাংশ মেটানো হবে সরিষার তেল দিয়ে। আর এই লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে গতবছর থেকেই সরিষার চাষ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কৃষিবিভাগ ইতিমধ্যে ১২ লাখ কৃষককে বীজ, সারসহ নানামুখী প্রণোদনাও দিয়েছে, যাতে কৃষকরা সরিষা আবাদে আগ্রহী হয়।


 


কৃষি বিভাগের এই উদ্যোগের প্রভাব পড়েছে মাঠেও। আমন আবাদের পর মাঠ জুড়ে সরিষার আবাদ দেখা যাচ্ছে দেশ জুড়ে। 


পরিকল্পনা অনুযায়ী ধানের উৎপাদন না কমিয়েই আগামী ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের মধ্যে স্থানীয়ভাবে ১০ লাখ টন তেল উৎপাদন করা হবে, যা চাহিদার শতকরা ৪০ ভাগ। এর ফলে তেল আমদানিতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।


সরিষা উৎপাদন ও গবেষণা নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, সরিষা উৎপাদন বাড়াতে গিয়ে যাতে ধানের আবাদের কোনো ক্ষতি না হয় সে দিকটিতে নজর রাখা হয়েছে। আমন ও বোরো এই দুই ধানের আবাদের মধ্যবর্তী সময়ে সরিষা আবাদ করা হয়। বিনা সরিষা-৯, বিনা সরিষা-১১ ও বিনা সরিষা-১২ এই তিনটি জাত প্রচুর ফলন দেয়। কম সময়ে ফসল তোলা যায়, ৮০ থেকে ৮২ দিনে।


সরকার যে তিন বছরের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে তা আগামী বছর শেষ হবে। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে ভিত্তি বছর ধরা হয়েছিল  ২০২১-২২ অর্থবছরকে। ঐ বছর ৬ লাখ ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়। আর ২০২২-২৩ প্রথম অর্থবছরে ৮ লাখ ১২ লাখ হেক্টর এবং ২০২৩-২৪ দ্বিতীয় অর্থবছরে ১০ লাখ ৯৬ হাজার হেক্টরে আবাদ হয়। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রথম বছর সরিষা উৎপাদন শতকরা ৩৩ ভাগ এবং দ্বিতীয় বছর ৭৯.৬৭ ভাগ বৃদ্ধি পাবে।


কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তথ্য হিসাব করে দেখিয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আবাদ হয় ১০ লাখ ৯৬ হাজার হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে ১ দশমিক ৩৬ টন হিসাবে মোট বীজ উৎপাদন হয়েছে  ১৪ লাখ ৯ হাজার টন। এই বীজ দিয়ে ৪ লাখ ৯১ হাজার লাখ টন তেল উৎপাদন সম্ভব। আর প্রতি কেজি ২৩০ টাকা টাকা হিসাবে মোট ১১ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে। দুই বছর আগের তুলনায় সাশ্রয় হবে ৫ হাজার কোটি টাকা।


কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, সরিষার উৎপাদন বাড়াতে অনাবাদি চরাঞ্চল, উপকূলের লবণাক্ত, হাওর ও পাহাড়ি অঞ্চলকে তেলজাতীয় ফসল চাষের আওতায় আনা এবং নতুন শস্যবিন্যাসে স্বল্প জীবনকালের ধানের চাষ করা হবে। 


বিনার মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর ২৬ হাজার কোটি টাকার সয়ারিন ও পামওয়েল আমদানি করা হয়। সয়াবিন তেলের নামে যা খাই তাতে সয়াবিনের পরিমাণ খুবই কম থাকে। এই তেল খাওয়া নিরাপদও নয়। এ কারণে আমরা ভোজ্য তেলে সয়াবিন নির্ভরতা কমিয়ে সরিষার তেল খাওয়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছি। ভোজ্য তেল হিসেবে সরিষার তেল নিরাপদ। অতীতে সরিষার তেলই খাওয়া হতো।


মানুষের ভোজ্য তেলের অভ্যাস সয়াবিন থেকে সরিষার তেলে পরিবর্তন সম্ভব কি না, এ বিষয়ে এই গবেষক বলেন, আমরা এ নিয়ে কাজ করছি। সাধারণ মানুষকে সরিষা খেতে নানামুখী প্রচারণা কার্যক্রম চালানো হবে।


সরিষার তেলে প্রচুর পরিমাণে এরিউসিক অ্যাসিড থাকে, যা ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়াতে পারে। ইউরিক অ্যাসিডের উচ্চ মাত্রা গাউট এবং কিডনিতে পাথরের মতো সমস্যার কারণ হতে পারে। এমন অভিযোগের বিষয় তিনি বলেন, এটা পুরোপুরি সত্য নয়। আমাদের পূর্বপুরুষরা সবাই সরিষার তেল খেত। মানুষকে সয়াবিন তেল খাওয়ার জন্য ব্যবসায়ীরা সরিষার তেলের বিরুদ্ধে কথা বলছে বলেন তিনি।



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার