সুষ্ঠু নির্বাচনের নির্দেশ মাঠ পর্যায়ে


, আপডেট করা হয়েছে : 23-12-2023

সুষ্ঠু নির্বাচনের নির্দেশ মাঠ পর্যায়ে

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শুধু দেশে নয়, বিদেশেও গ্রহণযোগ্য করতে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিভাগীয় কমিশনারদের সমন্বয়সভায় এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।


নির্বাচন সামনে রেখে গতকাল সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে তিন ধাপে বৈঠক করেন আট বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার।    


একাধিক বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সকালে জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠক করেন আট বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার।


স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে এই বৈঠক হয়। বৈঠকে মূলত নির্বাচনসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।


 


বৈঠকে আসন্ন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে কী কী চ্যালেঞ্জ আছে তা নিয়ে আলোচনা হয় এবং চ্যালেঞ্জগুলো পর্যালোচনা করা হয়। পরে চ্যালেঞ্জ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।


 


মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়, নির্বাচন সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখানো যাবে না। প্রয়োজনে সব ধরনের অপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।


বৈঠক সূত্র জানায়, জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোস্তাফিজুর রহমান বৈঠকে বলেছেন, ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে ভোট দিতে যেতে পারেন তা নিশ্চিত করতে হবে।


এ জন্য সব বাহিনীকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।


 


এরপর সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেন বিভাগীয় কমিশনাররা। এ সময় সারা দেশের কারাগার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। এরপর পাসপোর্ট, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ নিয়েও কথা বলেছেন সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব।


সর্বশেষ দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদসচিব মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে বিভাগীয় কমিশনারদের সমন্বয়সভা অনুষ্ঠিত হয়।


এ সময় জননিরাপত্তা বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।


 


উপস্থিত সূত্র জানায়, বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদসচিব মাহবুব হোসেন বলেছেন, এই নির্বাচন শুধু দেশে নয়, বিদেশেও যেন গ্রহণযোগ্য হয়। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে মাঠ প্রশাসনে সবার সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করা প্রয়োজন। ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেন তার ব্যবস্থা করতে হবে। যাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আছেন তাঁরা জনগণের কাছে ভোট চাইবেন। কেউ যদি আইন অমান্য করেন, দল-মত-নির্বিশেষে যেকোনো প্রার্থী, তাঁদের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। কাউকে যেন বিশেষ পক্ষপাত না করা হয়, শৈথিল্য না দেখানো হয়।


বৈঠকে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীও চাচ্ছেন যাতে সব দিক থেকে একটি সুন্দরতম নির্বাচন হয়। এখন মাঠ প্রশাসনকে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে বা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হোক বা স্বতন্ত্র হোক; কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।


বৈঠকের পর রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর কালের কণ্ঠকে বলেন, রাজশাহীতে ৩৯টি আসনে ৮৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আছেন। প্রতিটি সংসদীয় আসনে একজন যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ এবং একজন সহকারী জেলা ও দায়রা জজের নেতৃত্বে একটি কমিটি আছে। কোনো প্রার্থী বিধি-বিধান লঙ্ঘন করলে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটরা নির্বাচন কমিশনে প্রতিবেদন দেবেন। তাঁদের প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রার্থীর প্রার্থিতা পর্যন্ত বাতিল হতে পারে।


এই বিভাগীয় কমিশনার বলেন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মোবাইল কোর্ট থাকবে। তাঁরা কোনো আচরণবিধি অমান্য করতে দেখলে জেল-জরিমানাসহ সব কিছু করতে পারবেন। অভিযোগ রিটার্নিং অফিসারের কাছেও আসতে পারে। রিটার্নিং অফিসাররাও কঠোর ব্যবস্থা নেবেন।


 


৯৯৯ তদারকি করবে মাঠ প্রশাসন


গতকালের বৈঠকে ৯৯৯-এর কার্যক্রম বিভাগীয় কমিশনারদের দেখানো হয়েছে। যে কেউ নির্বাচনী অভিযোগ দায়ের করতে পারবে ৯৯৯-এ কল করে। ৯৯৯-এ কল করার পর নির্বাচনসংক্রান্ত অভিযোগ জানাতে ২ চাপতে হবে। আচরণবিধি লঙ্ঘনসংক্রান্ত অভিযোগ হলে ৯৯৯ কর্তৃপক্ষ কলটি সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং বা অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসারকে সংযুক্ত করে দেবে। আর আইন-শৃঙ্খলাসংক্রান্ত অভিযোগ হলে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি, এসপি বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সংযোগ করে দেওয়া হবে।


এই কার্যক্রম পরিচালনা করবেন ৯৯৯-এর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। আর তদারকি করবে জননিরাপত্তা বিভাগ। বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, ডিসি, এসপি দেখতে পারবেন কী কী বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়েছেন।


রাজশাহী বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেটা সার্ভারে ড্যাশ বোর্ডে দেখা যাবে। জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, দিনে কমপক্ষে একবার হলেও ৯৯৯ দেখতে হবে। এই অভিযোগ যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেটাও দেখতে হবে।



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার