খালেদা জিয়াকে আদালতে যেতে হবে: ওবায়দুল কাদের


, আপডেট করা হয়েছে : 02-10-2023

খালেদা জিয়াকে আদালতে যেতে হবে: ওবায়দুল কাদের

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, খালেদা জিয়ার পরিবার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলছেন। এই অবস্থায় তাকে বিদেশে যেতে হলে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী আদালতের শরণাপন্ন হতে হবে। আদালতের সিদ্ধান্ত ছাড়া খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। 


রোববার বিকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথসভায় তিনি এসব কথা বলেন। 

ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ শাখা, আশপাশের জেলা শাখা এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করতে এ সভা ডাকা হয়। সভায় নির্বাচন সামনে রেখে এবং অক্টোবরে সরকারের বেশ কয়েকটি বড় উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ঘিরে টানা কর্মসূচি ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ।


আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। দুর্নীতির দায়ে তার ৭ বছরের কারাদণ্ড হয়। তিনি লাহোর হাইকোর্টের আদেশে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্য যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। অনেকে আ স ম আব্দুর রবের কথা বলেছেন। আপনাদের মনে রাখতে হবে-আ স ম রবের বিচার হয়েছিল সামরিক আদালতে। প্রচলিত আদালতে নয়। দেশে তখন কোনো সাংবিধানিক সরকার ব্যবস্থা ছিল না। 


আ স ম রব, কর্নেল তাহেরের সঙ্গে একই মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন। পরে দেশের উচ্চ আদালত কর্নেল তাহেরের সেই প্রহসনের বিচার সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী, সপ্তম সংশোধনীকে বেআইনি, অসাংবিধানিক ও অবৈধ ঘোষণা করেন। সে কারণে আ স ম রবের বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি কোনো প্রকার উদাহরণ হিসাবে এই প্রসঙ্গে বিবেচিত হতে পারে না।


আরও উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, দেশের উচ্চ আদালত সম্প্রতি সংসদ-সদস্য হাজী সেলিমকে ১ মাসের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি ৩০ দিনের মধ্যেই বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। আদালতের রায়ে তার পাসপোর্ট বাতিল কিংবা ৩০ দিনের মধ্যে বিদেশে যাওয়ার কোনো প্রকার নিষেধাজ্ঞা না থাকায় এক্ষেত্রে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। 


ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়ার প্রতি সর্বোচ্চ উদারতা ও মানবিকতা দেখিয়েছেন। দেশের প্রচলিত আইন সংবিধান ফৌজদারি কার্যবিধির যতটুকু ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়েছে তার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে তিনি খালেদা জিয়াকে সাজা স্থগিত করে, বাসায় থেকে দেশের সর্বাধুনিক হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা সেবা গ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছেন। মানবিকতার এমন নজির পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি দেখানো খুবই কঠিন।


বিএনপিকে সীমারেখার মধ্যে কথা বলার পরামর্শ: অক্টোবরে সরকার পতন ঘটাতে বিএনপির মন্তব্যের জবাব দেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, যারা আমাদের পতন দেখছে, এই অক্টোবরে তাদেরই পতন হয় কিনা? নিজেদের পতনের জন্য অপেক্ষা করুন। ভুলের রাজনীতি আপনাদের পতনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। 


ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ বন্ধুকের নল দিয়ে ক্ষমতায় বসেনি। আওয়ামী লীগকে যারা ভয় দেখাচ্ছে, ৪৮ ঘণ্টা আলটিমেটাম শেষ, এখন অক্টোবরের আলটিমেটাম। অক্টোবরেই পতন ঘটাবে। পতন ঘটাতে ঘটাতে নিজেরাই যে কতবার খাদে পড়েছে। একটা রাজনৈতিক দলের কথাবার্তা সীমারেখার মধ্যে থেকে বলা উচিত। 


দলের নেতাদের বেফাঁস কথা না বলার আহ্বান: আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, যার যা মুখে আসে বলে দেন। চিন্তা করেন না কথাটা কতটা উপকারে আসছে আর কতটা ক্ষতি হবে। বক্তব্য-বিবৃতিতে সতর্ক থাকা উচিত। সময়টা খারাপ। একজন নেতার একটা কথা, একটা উচ্চারণ অনেক ক্ষতি করতে পারে। 


নেতাদের বিলবোর্ড প্রচারণা নিয়ে নিজের অস্বস্তি ও ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, দয়া করে বিলবোর্ডের খেলা বন্ধ করেন। এই বিলবোর্ডের দরকার নেই। এসিআর শেখ হাসিনার কাছে আছে, সবার রিপোর্ট তার কাছে জমা হচ্ছে। 


অক্টোবরে উদ্বোধন হচ্ছে চার বড় প্রকল্প: সেতুমন্ত্রী বলেন, ঢাকার হজরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল ৭ অক্টোবর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া ১০ অক্টোবর ঢাকা থেকে ভাঙা পর্যন্ত পদ্মা সেতু হয়ে রেল চলাচলের উদ্বোধন করবেন তিনি। 


চলতি মাসের ২৩ তারিখে উদ্বোধন হবে মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ। এর মাধ্যমে মেট্রোরেলের পুরো সুবিধা পাবেন নগরবাসী। ২৮ অক্টোবর উদ্বোধন হবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নদীর তলদেশের ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’। এ সময় তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪ অক্টোবর দেশে ফিরবেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাকে বড় ধরনের সংবর্ধনা দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হলেও জনদুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী তা করতে নিষেধ করেছেন বলে জানান ওবায়দুল কাদের।


সভায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 


এছাড়া সভায় ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।


সংবিধান অনুযায়ী সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে: সংবিধান অনুযায়ী সরকার দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। 


রোববার সচিবালয়ে তার নিজ দপ্তরে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইয়োমা কিমিনোরি’র সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে সেতুমন্ত্রী এ কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তার দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির প্রথম বৈঠক এরই মধ্যে (বৃহস্পতিবার) অনুষ্ঠিত হয়েছে বলেও জাপানের রাষ্ট্রদূতকে অবহিত করেন। 


তিনি সাংবাদিকদের জানান, সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশে জাপানের সহায়তায় চলমান প্রকল্পের অগ্রগতিসহ দুদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও কিভাবে জোরদার করা যায় সে বিষয়েও তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার