রাজশাহী মেডিকেলে আট মাসে সাপে কাটা ৫৫৮ রোগী ভর্তি, ২৭ জন মৃত্যু


, আপডেট করা হয়েছে : 17-09-2023

রাজশাহী মেডিকেলে আট মাসে সাপে কাটা ৫৫৮ রোগী ভর্তি, ২৭ জন মৃত্যু

বিষধর সাপের উপদ্রুব বাড়ায় রাজশাহী অঞ্চলের জেলাগুলোতে বেড়েছে সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা। সেই সঙ্গে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে সাপে কাটা মানুষের মৃত্যুর ঘটনাও।


এ বছরের আট মাসে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে রেকর্ডসংখ্যক ৫৫৮ জন সাপে কাটা রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে ২৭ জনের। মৃতদের অধিকাংশরই সাপে কাটার সাত দিনের মধ্যে মৃত্যু হয়। রামেক হাসপাতাল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।


বিশেষজ্ঞরা মনে করেন তপ্ত-উত্তপ্ত লালমাটির বরেন্দ্রভূমি এমনিতেই দেশের সবচেয়ে তাপপ্রবণ এলাকা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সম্প্রতি তাপপ্রবাহ আরও বেড়েছে। প্রকৃতি আরও উত্তপ্ত হওয়ায় প্রাণিকুলের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।


এছাড়া ঝোপজঙ্গল উজাড় হওয়া ছাড়াও বিষাক্ত সরীসৃপ বা এ জাতীয় প্রাণিদের আবাস ও খাদ্য শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। এর ফলে খাদ্যের খোঁজে বিষধর সাপ প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। মাঠে-ঘাটে খেত-খামারে কাজ করতে যাওয়া মানুষরা এসব সাপের ছোবলে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে।


রাজশাহী অঞ্চলে সাপে কাটা রোগীদের চিকিৎসা গ্রহণের আগেই মৃত্যু হয়েছে ৩৪ জনের। হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ২৭ জনের। চিকিৎসা শেষে সুস্থ হওয়ার পর সাপের দীর্ঘমেয়াদি বিষষ্ক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে আরও ১২ জনের। সব মিলিয়ে এ বছরের মাত্র আট মাসে রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে ৭৩ জনের। আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ৫৩ জন। ২০২১ সালে সাপের কামড়ে রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল।


সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, জানুয়ারিতে সাপে কাটা ১২ রোগীকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে দুজনকে বিষধর কোবরা সাপে কাটে। বাকি ১০ জনকে কামড়ায় বোড়া সাপে। এ ছাড়া ফেব্রুয়ারিতে ২২, মার্চে ৫৮, এপ্রিলে ৪৭, মে মাসে ৬৫, জুনে ৭৯, জুলাইয়ে ১২৪ জন এবং আগস্টে সর্বাধিক ১৫১ জনকে সাপে কাটে। এর মধ্যে সর্বাধিক ৯ জন সাপে কাটা রোগী মারা গেছে গত আগস্ট মাসে। এসব সাপে কাটা রোগী রামেক হাসপাতালে আসেন রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহ জেলা থেকে।


রামেক হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি বছরে সাপে কাটা ৫৫৮ রোগীর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ১০৮ জনকে বিষধর কোবরা সাপে কাটা ছিল। এ ছাড়া করাইট জাতীয় সাপে কাটে ২৩, কোবরায় কাটে ২৯, অতি বিষধর রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়ায় কাটে ২০ জনকে। এর মধ্যে করাইটে কাটা ৯ জনের ও রাসেল ভাইপারে কাটা পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে চিকিৎসাধীন অবস্থায়।


রাজশাহী বিভাগের যে জেলাতেই কাউকে সাপে কাটে চিকিৎসা নিতে তারা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। উপজেলা বা জেলা হাসপাতালগুলিতে সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসার ‘এন্টিভেনাম’ ইনজেকশান নেই। ফলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালই সাপে কাটা রোগীদের একমাত্র গন্তব্য।


রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহম্মেদ বলেন, সম্প্রতিক রাজশাহী অঞ্চলের জেলাগুলোতে সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।


তিনি বলেন, দেশে সাপে কাটা মোট রোগীর শতকরা ৮০ ভাগই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসেছেন। রামেক হাসপাতালে এন্টিভেনাম বা বিষ প্রতিষেধকের আগে বেশ সংকট ছিল তবে সরবরাহ বাড়ায় এখন নেই।


রাজশাহী অঞ্চলে সাপে কাটা রোগী উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে জানিয়ে রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, নানা কারণে বরেন্দ্র ভূমিতে বিষধর সাপের বিচরণ বেড়েছে। ঝোপ-জঙ্গল ও বনভূমি উজাড় হওয়ায় সাপেরা গ্রাম জনপদে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় যাচ্ছে খাবারের খোঁজে। বিশেষ করে ধান খেতে সাপেরা বের হচ্ছে ইঁদুর খেতে। এ সময় সাপেরা খেতে কাজ করা লোকজনকে কামড় দিচ্ছে। আবার খাবারের খোঁজে বাসা বাড়িতেও ঢুকছে সাপ। সূত্র- যুগান্তর


  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার