গোদাগাড়ীর সেই চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে নগরীতে পুকুর ভরাট চলছেই, কাউন্সিলরকে হেনস্থা


, আপডেট করা হয়েছে : 16-09-2023

গোদাগাড়ীর সেই চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে নগরীতে পুকুর ভরাট চলছেই, কাউন্সিলরকে হেনস্থা

রাজশাহী মহানগরীতে উচ্চ আদালতে নিষেধাজ্ঞা অম্যান্য করে নগরীর সপুরা এলাকায় সুখানদিঘী নামের বিশালাকার পুকুরটি আবারো রাতের আঁধাওে ভরাট চলছে। গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ট্রাকে কওে বালু এনে পুকুরের উত্তর দিকের অংশ ভরাট করছেন গোদাগাড়ীর মাটিকাটা ইউনিয়নের চেয়রাম্যার সোহেল রানা। তাঁর নেতৃত্বে গত প্রায় এক বছর ধরে থেমে থেমে দিঘীটি ভরাটে মরিয়া হয়ে উঠেছে প্রভাবশালী একটি মহল। এ নিয়ে কালের কণ্ঠসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক খবর প্রকাশ হলেও বন্ধ হয়নি ভরাট কাজ। এরই মধ্যে একটি অংশ ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে মার্কেট। ওই মার্কেটের পেছনের অংশের পুকুরটি এখন ভরাট করা হচ্ছে বহুতল ভবন গড়ে তোলার জন্য।


সূত্র মতে, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আইনে বলা আছে, কোনো জলায়শ ভরাট করে সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। কিন্তু সেই নির্দেশনাও মানা হয়নি এ ক্ষেত্রে। সুখানদিঘী ভরাট করে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে ১৮টি দোকান। যা দেখে রীতিমতো স্তম্ভিত স্থানীয়রা। কিন্তু প্রভাবশালীদের লাঠিয়াল বাহিনীর দাপটে ও প্রশাসনের নির্লিপ্ততায় স্থানীয়রা এ নিয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। এ নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে স্থানীয় নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামসুন নাহারকেও হেনস্থা করেছে ওই মহলটি।


সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দিঘীটির উত্তর পাশে বেশ কিছু জায়গা ভরাট করা হয়েছে। সেই ভরাট করা জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে মার্কেট। উপরে টিন আর নিচে ইটের গাঁথুনি দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে পাশাপাশি ১৮টি দোকান। দিঘীর উত্তর পাড় ও পূর্ব পাড়ে এ মার্কেটটি গড়ে তোলা হয়েছে।


স্থানীয়রা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, শত বছর ধরে এই দিঘীর পানি ব্যবহার করে আসছেন স্থানীয়রা। কিন্তু গত প্রায় এক বছর ধরে থেমে থেমে দিঘীটি ভরাট করা হচ্ছে। দিঘীর চারিদিকে দোকান ঘর আর টিন দিয়ে প্রাচীর গড়ে তোলা হয়েছে। টিনের দরজা খুলে রাতের আঁধারে ঢুকছে বালুর ট্রাক। ফলে ভিতরে কি হচ্ছে-তা জানতেও পারছেন না এলাকাবাসী। এতে দিঘীটির ভবিষ্যত হুমকির মধ্যে পড়েছে। দিঘীর পানি ব্যবহার করতেও পারছেন না স্থানীয়রা। স্থানীয়রা আরও জানান, সুখানদিঘির একটি অংশের একজন অংশীদার হলেন প্রয়াত ইউনুস আলীর ছেলে সেলী। তাঁর কাছ থেকে গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নের চেয়ারমান সোহেল রানা সম্প্রতি ওই অংশটি কিনে নিয়েছেন। চেয়ারম্যান কিনে নেওয়া সেই অংশ এখন রাতের আঁধাওে ভরাট করছেন। এর আগে ভরাট করা অংশে তিনি দোকান ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন। এখন আবারও ভরাট করে সেখানে বহুতল ভবন গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছেন।


স্থানীয় সংরক্ষিত নারী আসনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামসুন নাহার অভিযোগ করে জানান, স্থানীয় মোস্তাক হোসেন, সৌরভ আলী, সুমন ও কালুসহ ১২-১৫ জনের একটি দলের নেতৃত্বে দিঘীটি ভরাট হচ্ছে রাতে। তবে এর পেছনে রয়েছেন গোদাগাড়ীর চেয়ারম্যান সোহেল। আমি খবর পেয়ে দিঘীটি ভরাটকাজে বাধা দিতে গেলে তারা আমার ওপরেও চড়াও হয়। আমার গায়ে শুধু হাত তুলেনি। তাদের বেপরোয়া আচরণ আমাকে হতবাক করেছে। আমি এ বিষয়ে বোয়ালিয়া থানায় মৌখিক অভিযোগও করেছি। পুলিশ তাৎক্ষণিক এসে কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু আবারও ভরাট চলছে প্রতি রাতেই।’


এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই সোহেল ছিলেন গোদাগাড়ীর মাদককারবারিদের একজন। পুলিশের এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভূক্ত মাদককারবারী তিনি। একসময় মাদকবিরোধী অভিযানের সময় দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন তিনি। পরে দেশে ফিরে এসে হোন ইউপি চেয়ারম্যান।


এ ব্যাপারে দিঘি ভরাট করে মার্কেট নির্মাণকারী মাটিকাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহেল রানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার অংশ আমি ভরাট করছি। সেখানে মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে।’


রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথোরাইজড কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘নগরীতে কোনো জলায়শয় ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। জলাশয় ভরাট করে সেখানে স্থাপনা নির্মাণের অনুমতিও আমরা দিচ্ছে না। যারা এটি করছে, তারা অবৈধভাবে করছে। অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিব।’


  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার